খাদিজার জন্য দ্রুত ও সাশ্রয়ী ন্যায়বিচার নিশ্চিত করলো গ্রাম আদালত
October 24, 2024
খাদিজা বেগম (৪৫), নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের একজন বাসিন্দা, স্থানীয় বিচার ব্যবস্থা কীভাবে জীবন বদলে দিতে পারে তার একটি বাস্তব উদাহরণ । প্রতিবেশী আবদুর রাজ্জাক ভূঁইয়ার কাছে ১,০০,০০০ টাকা ঋণ দেওয়ার পর, খাদিজা বিপদে পড়ে যায় । রাজ্জাক সময়মতো তার পুরো টাকা পরিশোধ করতে অস্বীকার করে । সে অর্ধেক টাকা ফেরত দেয় এবং বাকি টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায় । এরপর খাদিজা বিষয়টি সমাধানের জন্য জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে যায় । কিন্তু জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে তার মামলাটি গ্রাম আদালতে পাঠানো হয় ।
মাত্র ২০ টাকা (ইউএস ডলার ০.১৭) ফি দিয়ে খাদিজা তার মামলা পুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে দাখিল করে । আদালত দ্রুত মামলাটির নিস্পত্তির ব্যবস্থা করে । রাজ্জাক অবশিষ্ট ৫০,০০০ টাকা (ইউএস ডলার ৪১৭) পরিশোধ করতে সম্মত হয়, যার ১০,০০০ টাকা (ইউএস ডলার ৮৩) তাৎক্ষণিকভাবে এবং বাকি টাকা অক্টোবর ২০২৪ এর মধ্যে পরিশোধ করবে বলে লিখিত দেয় । এ অর্থ এবং আগের জমানো টাকা দিয়ে খাদিজা একটি গরু কিনে যা তার জীবিকা নির্বাহের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে । খাদিজা বলে, “ মাত্র ২২ দিনে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে যে বিচার পেয়েছি, তা অন্য কোথাও কখনো পাওয়া সম্ভব ছিল না ।” এছাড়া কোন জেল বা জরিমানা ছাড়াই বিরোধ নিস্পত্তি হওয়ায় উভয়ের মধ্যে নতুন ভাবে একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে । মামলার ফি এবং যাতায়াত সহ মাত্র ৬০ টাকা (ইউএস ডলার ০.৫০) খরচে খাদিজা শুধুমাত্র তার পাওনা টাকায় উদ্ধার করেনি, বরং এর মাধ্যমে তার একটি সুন্দর ভবিষ্যতেরও পথ সুগম হয়েছে ।
খাদিজার গল্প বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের সাফল্যকে তুলে ধরেছে, যা স্থানীয় বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি কার্যকরী সমাধান । ৪২ লক্ষেরও বেশি মামলা আনুষ্ঠানিক আদালতগুলোতে মামলা জট সৃষ্টি করে রেখেছে, যা বিশেষত দরিদ্র জনগণের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় বাঁধা । এ সমস্যা সমাধানে, বাংলাদেশ সরকার গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬, প্রণয়ন করে, যা স্থানীয় পর্যায়ে ছোটখাট বিরোধ সমাধানে একটি আধা-আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছে । ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় প্রকল্পটি পাইলট পর্যায়ে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৬ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত পরিচালিত হয়েছে । পূর্বের পর্যায়গুলির সাফল্যের কারণে, সরকার এই প্রকল্পটিকে সমগ্র বাংলাদেশে (চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চল ব্যতিরেকে) বিস্তৃত করার সিদ্ধান্ত নেয় । লক্ষ্য হলো প্রায় ৮৯ মিলিয়ন গ্রামীণ জনগণকে ন্যায়বিচার প্রদান করা । অত্র প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে, ৩,০৪১টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) গ্রাম আদালত সক্রিয় করা হয়েছে । এখন সর্বমোট ৪৪৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) গ্রাম আদালত কার্যকর রয়েছে যা সাশ্রয়ী ও সময়োপযোগী বিরোধ নিষ্পত্তি নিশ্চিত করছে । খাদিজার মামলা এই প্রক্রিয়ার একটি অনন্য উদাহরণ।